সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও ইতিহাস

নিঝুম তালুকদার আদিবাসী প্রসঙ্গ বস্তুতঃ বাংলাদেশে ‘ইন্ডিজেনাস’ বা ‘আদিবাসী’ কারা তা একটি মীমাংসিত বিষয়। কিন্তু তারপরও সরকার ও বাঙালী জাত্যাভিমানী-সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন একটি গোষ্ঠী জেনেও না জানার ভান করে আদিবাসী নিয়ে বিতর্কের অবতাড়না করছে। বিষয়টিকে জটিল রূপ দিয়েছে। ‘আদিবাসী’ বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল বা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সরকার আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করতে চাইছে অথবা তার দায়দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চাইছে। অন্য কোন দেশে এমন হয়নি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ এবং গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি বলে দাবীদার আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে। আবার বলা যেতে পারে, সরকার বর্তমানে আদিবাসী বিষয়ে ও আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে বা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। অথবা আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সরকার যে চরম রক্ষণশীল, এমনকী প্রতিক্রিয়াশীল- তার মুখোশই উন্মোচিত হয়েছে। এ জন্য এই সরকারকে একদিন মাশুল দিতে হবে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের আদিবাসীরা হুট করে নিজেরাই নিজেদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে দাবী করে বসেনি। জাতিসংঘ
সাম্প্রতিক পোস্টগুলি

চাকমাদের খাঁ, রায়, খীসা, দেওয়ান ও তালুকদার উপাধি

নিঝুম তালুকদার আমি পুর্বের আলোচনাতে চাকমা রাজ বংশের বংশানুক্রমিক ও পিরি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আর নতুন করে সে বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই। তাই সংক্ষেপে আলোচনা শুরু করছি। সবাই সাথে থাকুন। পড়তে থাকুন। জনু রাজার পুত্র ছিল না―শুধু দুই কন্যা। জনু রাজা ১২০ বৎসর পৰ্যন্ত জীবিত ছিলেন। বড় কন্যা সাজোম্বীকে মগ রাজা বিবাহ করে। দ্বিতীয় কন্যা রাজেস্বীকে বুড়া বড়ুয়া বিবাহ করেন। বুড়া বড়ুয়ার পুত্র সাত্তুয়া রাজা হন। তিনি পরে পাগলা রাজা বলে প্ৰসিদ্ধ হন। পাগলা রাজা অতিশয় জ্ঞানী ছিলেন। কথিত আছে মন্ত্র বলে তিনি চিৎকলিজা বের করে ধৌত করে আবার ঢুকিয়ে রাখতেন। এই কার্য করতে তাঁর রাণী উকি দিয়ে দেখলে, তিনি আর ঢুকাতে পারলেন না। তাঁতে প্রকৃত পাগল হন। যাকে তাকে কাটতে লাগলেন। সেজন্য তার রাণীর সম্মতিতে তাকে হত্যা করা হয়।  প্ৰবাদ আছে- "তিনি একদিন টংগীতে বসেছিলেন এবং জংগলী হাতী এসেছে বলে পূর্ব প্ৰস্তাব মতে মিথ্যা রটনা করাতে বন্য হাতী দেখবার জন্য মাথা বের করলেন। তখন পেছনদিক হতে তার শিরচ্ছেদ করা হয়।" পাগলা রাজার মৃত্যুর পর রাণী রাজকাৰ্য চালান। “কাটুয়া কন্যার” আমল বলে তার দুর্না

চাকমা জাতির এক মহীয়সী নারী চাকমা রাণী কালিন্দী

 ইলিরা দেওয়ান চাকমা রানী কালিন্দী কে নিয়ে সকলের মুখে প্রায়ই শোনা যায় যে চাকমা রাণী কালিন্দীর কারনে চাকমা জাতি রাজ্যহারা। তারই ভুলের জলন্ত আগুনের মশালে দহনীয় সমগ্র চাকমা জাতি। রাণী কালিন্দীর বিরদ্ধে সবার মাঝে যে ধারনা সেই বিষয় নিয়ে আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা । সবাই সাথে থাকুন। পড়তে থাকুন।  বৃটিশ আমলে উপমহাদেশের মহীয়সী নারীদের বীরত্ব গাঁথা কিংবা সমাজে তাঁদের অবদানের কথা বললে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে নবাব ফয়জুন্নেসা, বেগম রোকেয়াদের কথা। কিন্তু তাঁদের জন্মেরও পূর্বে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে আরেক মহীয়সী নারীর কথা ক’জনইবা জানেন! উনিশ শতকের প্রথমদিকে রাস্তাঘাটহীন দূর্গম পার্বত্য এলাকার কুদুকছড়ির সাধারণ এক চাকমা জুমিয়া পরিবারে জন্মেছিলেন কালাবি চাকমা। পরবর্তীতে চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি ‘কালিন্দী রাণী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠলেও তিনি স্বশিতি ছিলেন এবং তাঁর প্রাজ্ঞ দিয়ে রাজপরিবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সম হয়েছিলেন। কালিন্দী রাণী শুধু বৈষয়িক বুদ্ধিতে কিংবা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় প্রাজ্ঞ ছিলেন না, এর পা

কাপ্তাই বাঁধ ও রড়পোরং

নিঝুম তালুকদার কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ পার্বত্যঞ্চলের এক বেদনাদায়ক যুগান্তকারী ঘটনা। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই বাঁধ নির্মাণ এই অঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়। বিষয়টি এখনও বির্তকিত রয়েছে। পৃথিবীর অনেক আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে উন্নয়নের নামে যে সব প্রকল্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বির্পযয় ও বিলুপ্তির জন্য দায়ী কাপ্তাই বাঁধ তন্মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। এই বাঁধ অত্রাঞ্চলে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়।  পার্বত্য অঞ্চলের জৈব্য বৈচিত্র্য, পরিবেশ ধ্বংস ছাড়াও চাকমা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকজনকে বিলুপ্তির কাছাকাছি এনেছে কাপ্তাই বাঁধ। কাপ্তাই বাঁধ পার্বত্যঞ্চলের জনগণের তথা চাকমা জনগোষ্ঠীর দূর্গতির মূল কারণ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প উন্নয়নের নামে নির্মিত এই বাঁধ পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম আদিবাসী জনগোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়কে বিলুপ্তি ও ধ্বংসের প্রান্তে এনেছে। আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে এই বাঁধ নির্মিত হলেও এর বিরুপ প্রভাব এখনও বিদ্যমান। ভৌগলিক, পরিবেশগত ও জৈব্য বৈচিত্র্যের উপর এর অবর্ণনীয় ক্ষতিকর প্রভাব হাজার বছরব্যাপী অত্রাঞ্চলে বিরাজ করবে। বাঁধ নির্মাণ কার্য যারা প্রত্যক্ষ

চাকমা রাজবংশের বিজক ও পিরি

নিঝুম তালুকদার ৫১তম চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের রাজপিরি ও বিজোগ বিগত কয়েক দিন আগে আমার আলোচনা পোষ্টে "চাকমা রাজবংশের ইতিহাস"টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের আরো চাকমা রাজবংশের ইতিহাস সর্ম্পকে জানার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। তাতে আমারও উৎসাহ অগ্রসর হয়। আমিও উৎসাহ নিয়ে বিজোক ইতিহাস ঘাটাঘাটি করি। ইতিহাস সুত্রমতে বর্তমান চাকমা সার্কেলের রাজা দেবাশীষ রায়ের আমলে তিনি ৫১তম চাকমা রাজা যেভাবে হলেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করি। ০১. অতি পুর্বকালে হিমালয়ের পাদদেশে শাক্য নামে এক রাজা ছিলেন। কলাপ্যা নগর তার রাজ্যের রাজধানী ছিল। তিনি ঐ নগরে ঈশ্বরের এক মূর্তি প্ৰস্তুত করিয়ে পূজা করতেন। ঐ রাজার বংশজ মন্ত্রীর নাম সাংকুস্য। মন্ত্রীরাজ রাজধানী শাসনের ভার নিয়ে দুষ্ট দমন করে সাবধানে প্রজা পালন করতেন। ০২. শাক্যরাজার পুত্ৰ সুধন্য মহা তেজস্বী হয়ে সর্বদা ক্ষত্ৰিয়ভাবে রিপু দমন করে বীর ভাব প্রকাশ করে থাকতেন। সাংকুস্য মন্ত্রীর পুত্ৰ জয়ধন সেনাপতির সংগে মহারাজ সুধন্য যুদ্ধসজ্জায় সর্বদা সজ্জিত থাকতেন এবং শত্রু দমনে সাবধান থাকতেন। সুধন্য মহারাজের দুই রাণী, তিন পুত্র ছিল। বড়রাণীর গর্ভজাত গুণধন রাজভো

বৃটিশ শাসনে চাকমা জনগোষ্ঠীর সম্পাদনা

নিঝুম তালুকদার পলাশীর যুদ্ধের তিন বছর পরে, মুর্শিদাবাদের নতুন নবাব মীর কাশিম বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে চট্টগ্রাম বর্ধমান এবং মেদিনীপুর উপহার হিসেবে দিয়ে দেন। যেটি গতকাল আলোচনায় বলা হয়েছে। দিনটি ছিল ৫ জানুয়ারী ১৭৬১ সালে, কোম্পানীর প্রতিনিধি হ্যারি ভেরেলস্ট চট্টগ্রামের শাসনভার সুবেদার মোহাম্মদ রেজা খানের কাছ থেকে গ্রহন করেন। তবে তখনো চাকমা রাজা শের দৌলত খান স্বাধীনভাবে তার রাজ্য পরিচালনা এবং মুঘলদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। এবং কোম্পানীর শাসন মেনে না নিয়ে কোম্পানী কর্তৃক ধার্য নির্ধারিত খাজনা প্রদানে বিরত ছিলেন। ফলে কোম্পানির সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, যা ১৭৮৭ সালপর্যন্ত চলেছিল। কোম্পানী চাকমা রাজের বিরুদ্ধে চারটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। সেগুলো হল - ১৭৭০, ১৭৮০, ১৭৮২ এবং ১৭৮৫ সালের যুদ্ধ। যুদ্ধে কোম্পানী বিশেষ সুবিধে করতে না পারায় এবং চাকমা রাজ্যে বাণিজ্য অবরোধের ফলে সৃষ্ট সমস্যায় - দুই পক্ষই ১৭৮৫ সালে একটি শান্তি আলোচনা চালায়। চাকমা রাজের পক্ষে রাজা জানবক্স খান, শের দৌলত খানের পুত্র অংশ নেন। পরবর্তীতে ১৭৮৭ সালে কলকাতায় চাকমা রাজের সাথে কোম্প

জুম্মবির অতীত কথা ও স্মৃতি

তারাচরন চাকমা জুম্মবিতে লেখার, বলার ও প্রকাশ করতে সাহজ ও উৎসাহ দিয়ে সবসময়  সাথে থাকবেন। জুম্ম ঘরে জন্ম হওয়াতে তার নাম জুম্মবি। জুম্মবির তেরোটি জাতি সত্বার দশ ভাষার ছোট একটি দেশ জুম্ম দেশ। দশ ভাষায় কথা বলাতে তাকে ভাষাবিও ডাকা হয়। চার দিকে সবুজ সবুজ মুড়ো ও পাহাড় নিয়ে জুম্মবির জুম্মদেশে প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাইনো তিব্বতী মঙ্গোলয়ড ১৩ টি জাতিগোষ্ঠী এখানে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছে। প্রায় ৫,০০,০০ (পাঁচ লক্ষ)জনসংখ্যার অভিবাসী জুম্মজাতি প্রধান দু'টি হলো চাকমা এবং মারমা। এরা ছাড়াও আছে ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখো, ম্রো, খিয়াং, বম,খুমি, চাক,গুর্খা, আসাম। খুব সুখে ছিল সেখাানে তারা। জুম্মবির জুম্মদেশে দশ ভাষা ভাষি তেরোটি জাতি ছাড়া অন্য কোন জাতি ছিল না। ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে মগধের চম্পক নগরের রাজা উদয় গিরি এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘ