সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও ইতিহাস

নিঝুম তালুকদার আদিবাসী প্রসঙ্গ বস্তুতঃ বাংলাদেশে ‘ইন্ডিজেনাস’ বা ‘আদিবাসী’ কারা তা একটি মীমাংসিত বিষয়। কিন্তু তারপরও সরকার ও বাঙালী জাত্যাভিমানী-সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন একটি গোষ্ঠী জেনেও না জানার ভান করে আদিবাসী নিয়ে বিতর্কের অবতাড়না করছে। বিষয়টিকে জটিল রূপ দিয়েছে। ‘আদিবাসী’ বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল বা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সরকার আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করতে চাইছে অথবা তার দায়দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চাইছে। অন্য কোন দেশে এমন হয়নি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ এবং গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি বলে দাবীদার আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে। আবার বলা যেতে পারে, সরকার বর্তমানে আদিবাসী বিষয়ে ও আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে বা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। অথবা আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সরকার যে চরম রক্ষণশীল, এমনকী প্রতিক্রিয়াশীল- তার মুখোশই উন্মোচিত হয়েছে। এ জন্য এই সরকারকে একদিন মাশুল দিতে হবে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের আদিবাসীরা হুট করে নিজেরাই নিজেদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে দাবী করে বসেনি। জাতিসংঘ

চাকমাদের খাঁ, রায়, খীসা, দেওয়ান ও তালুকদার উপাধি

নিঝুম তালুকদার


আমি পুর্বের আলোচনাতে চাকমা রাজ বংশের বংশানুক্রমিক ও পিরি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আর নতুন করে সে বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই।
তাই সংক্ষেপে আলোচনা শুরু করছি।
সবাই সাথে থাকুন। পড়তে থাকুন।
জনু রাজার পুত্র ছিল না―শুধু দুই কন্যা। জনু রাজা ১২০ বৎসর পৰ্যন্ত জীবিত ছিলেন। বড় কন্যা সাজোম্বীকে মগ রাজা বিবাহ করে। দ্বিতীয় কন্যা রাজেস্বীকে বুড়া বড়ুয়া বিবাহ করেন। বুড়া বড়ুয়ার পুত্র সাত্তুয়া রাজা হন। তিনি পরে পাগলা রাজা বলে প্ৰসিদ্ধ হন। পাগলা রাজা অতিশয় জ্ঞানী ছিলেন। কথিত আছে মন্ত্র বলে তিনি চিৎকলিজা বের করে ধৌত করে আবার ঢুকিয়ে রাখতেন। এই কার্য করতে তাঁর রাণী উকি দিয়ে দেখলে, তিনি আর ঢুকাতে পারলেন না। তাঁতে প্রকৃত পাগল হন। যাকে তাকে কাটতে লাগলেন। সেজন্য তার রাণীর সম্মতিতে তাকে হত্যা করা হয়। 
প্ৰবাদ আছে- "তিনি একদিন টংগীতে বসেছিলেন এবং জংগলী হাতী এসেছে বলে পূর্ব প্ৰস্তাব মতে মিথ্যা রটনা করাতে বন্য হাতী দেখবার জন্য মাথা বের করলেন। তখন পেছনদিক হতে তার শিরচ্ছেদ করা হয়।" পাগলা রাজার মৃত্যুর পর রাণী রাজকাৰ্য চালান।
“কাটুয়া কন্যার” আমল বলে তার দুর্নাম রটেছিল। পাগলা রাজার কন্যা অমংগলী। রাজ কন্যা অমঙ্গলীর সাথে রাজ অমাত্যের পুত্র মুলিমা থংজার বিবাহ হয়। অমঙ্গলীর পুত্র ধাবনাই রাজ সিংহাসন লাভ করেন। অমঙ্গলীর আরো একটি পুত্র ছিল তার নাম পিড়া ভাঙ্গা। রাজা ধাবনাই মৃত্যু হলে তার পুত্র কুমার ধারাম্যা রাজা হন। ধারাম্যা কিছু দিন রাজত্ব করে মুত্যু বরণ করার পর তার পুত্র মৌগ্যল্যা রাজা হলেন। ১৬৬৬ খ্রিষ্ঠাব্দে শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম দখল করেন এবং চট্টগ্রাম দিল্লীর মোঘন সম্রাজ্যভুক্ত করেন। এ সময় চাকমা রাজারা মোঘল শাসন কালে “খা" এবং মেয়েদের জন্য “বিবি” উপাধি গ্রহণে গৌরব অনুভব করতেন। তখন মুসলিম সমাজ রীতিতে চাকমা নারীদের মৃত্যু হলে দাহক্রিয়া সময় পশ্চিম দিকে মাথা রেখে দাহ করা হয়। এই জন্য বাঙ্গালী মুসলমান ভাবধারায় চাকমা রাজাদের মধ্যে সংমিশ্রিত নাম পরিদৃষ্ট হয়। কালক্রমে মেয়েদের উপাধি “বিবি” নাম হতে “বি” পরিবর্তীত হয়। এ মোগল সময় রাজা মৌগল্যার দুই পুত্রের নাম রাখেন জুবাল খাঁ ও ফতে খাঁ নামে। রাজা মৌগল্যার মৃত্যুর পর জুবাল খা রাজা হন। আরাকানদের সঙ্গে জুবাল খাঁর বহু বার যুদ্ধ হয়েছে। তার সেনাপতি কালু খাঁ সর্দার আর মুসলমান নবাবদের সঙ্গে অনেক বড় বড় যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। জুবাল খাঁ অল্প বয়সে মারা যান এবং রাজ্য শাসনের জন্য তার কোন সন্তান ছিল না।সুতরাং জুবাল খাঁ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তার ভাই ফতে খাঁ রাজা হন। ১৭১৫ খ্রিষ্ঠাব্দে ফতে খাঁ বাংলা নবাবেদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। ফতে খাঁর তিন পুত্র ছিল। শেরমুস্ত খাঁ, রহমত খাঁ ও শেজান খাঁ। জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেরমুস্ত খাঁ ১৭৩৭ খ্রিষ্ঠাব্দে রাজা হন। চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর রাজত্বকালে চট্টগ্রাম জেলাসহ পাবর্ত্য অঞ্চল তার অধিকারে ছিল। তার রাজ্য সীমা ছিল উত্তরে ফেনী নদী, দক্ষিণে শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্তান, পূর্বে লুসাই পাহাড়, পশ্চিমে নিজামপুর রাস্তা অর্থাৎ বর্তমান ট্রাংক রোড। আরাকানীদের অত্যাচারে চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁ মোগল নায়েকের সঙ্গে মিত্রতা করেন এবং শুল্ক প্রদানে স্বীকৃতি প্রদান করেন। মোগল শাসনকালে চাকমা রাজা ছিলেন করদ রাজন্যবর্গ। চাকমা রাজা রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে সম্পূর্ন স্বাধীন ছিল। সে সময়ে চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর রাজধানী ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাতামুহুরি নদীর নিকটবর্তী। চাকমাদের বহু স্মৃতি চিহ্ন আজও পরিদৃষ্ট হয়। যেমন- চাকমা পুকুর, চাকমা কুল, চাকমা বিল, চাকমা পাড়া ইত্যাদি যদিও বর্তমানে সেখানে চাকমা বসতি নেই। রাজা শেরমুস্ত খাঁর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তার ভাই শের্জান খাঁর পুত্র শুকদেব রাজা হন। রাজা শুকদেবের কার্যকলাপের সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মোঘলদের হতে “রায়’ উপাধি এবং শুক তরফ নামে একটি তরফের বন্দোবস্তি প্রাপ্ত হন। তখন থেকে রাজার নাম হয় রাজা শুকদেব রায়।
রাজা শুকদেব রায় পূর্ব রাজধানী আলী কদম ত্যাগ করে চাকমা অধ্যুষিত রাঙ্গনীয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের শিলক নদীর নিকটবর্তী স্থানে একটি মনোহর প্রাসাদ নির্মান করেন। সেই স্থান “শুক বিলাস” নাম প্রদান করে রাজধানী স্থাপন করেন। রাজা শুকদেব রায় হিন্দু ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন । ত্রিপুরার মহারাজ চাকমা রাজা শুকদেব রায়ের কার্য্যকলাপে সন্তষ্ট হয়ে সম্প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ তাঁকে কয়েক ঘর ত্রিপুরা প্রদান করেন । ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে রাজা শুকদেব রায় ছিলেন মোগল আমলের শেষ রাজা । তিনি রাজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে নিযুক্ত চাকমা সর্দার ও সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে "শুক বিলাস" রাজধানীতে ডেকে সর্বপ্রথম “খীসা, দেওয়ান ও তালুকদার” উপাধি প্রদান করেন । চট্টগ্রামের পদুয়াতেোও অদ্যাবধি চাকমা রাজবংশের বহু স্মৃতিচিহ্ন পরিদৃষ্ট হয় । যেমন –শুকদেব তরফ, রাজার দীঘি, শুকবিলাস ইত্যাদি ।
১৭৬০ খৃষ্টাব্দে নবাব মীর কাশীম ইংরেজ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চট্টগ্রামের শাসনভার ইংরেজদের হাতে অর্পন করেন । তাদের শাসনামলে শাসনের সুবিধার্থে ও ভৌগলিক দুরত্বের কারনে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন , একটি অংশ চট্টগ্রাম এবং অপর অংশটি পার্বত্য চট্টগাম অঞ্চল নামে অভিহিত করা হয় । রাজা শুকদেব রায়ের মৃত্যুর পর ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দে তাঁর পুত্র সেরদৌলত খাঁ রাজ্য ভার গ্রহণ করেন । এ সময় ইংরেজদের সাথে ভীষণ যুদ্ধ হয় । তিনি ইংরেজদের কর দেওয়া বন্ধ করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন ।সের দৌলত খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জান বক্স খাঁ ১৭৮২ খৃষ্টাব্দে রাজা হন । তারঁ সময়ে ১৭৮৩, ১৭৮৪, ১৭৮৫ খৃষ্টাব্দে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ হয়, যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জানবক্স খাঁ তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এর নিকট বশ্যতা স্বীকার করেন।
এ সময়টি ইতিহাসের পাতায় "চাকমা বিদ্রোহ" নামে পরিচিত।
রাজা জানবক্স খাঁ নানা অসুবিধার কারণে শুকবিলাস হতে রাঙ্গুনীয়া উপজেলায় চাকমা অধ্যুষিত রাজানগরে আবার নতুন রাজধানী স্থাপন করেন । তিনি ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন ।
রাজা জান বক্স খাঁর মৃত্যর পর টকবর খাঁ রাজা হন। তাঁর সময়ে রাজা নগরে সাগর দীঘি খনন করা হয় । টকবর খাঁ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। রাজা টব্বর খাঁর মৃত্যুর পর তদীয় ভ্রাতা জব্বর খাঁ রাজা হন। রাজবংশের কুলপ্ৰথা মতে জব্বর খাঁর মৃত্যুর পর তদীয় পুত্ৰ ধরমবক্স খাঁ ১৮১২ খ্রী, রাজা হন। মহারাজা চট্টগ্রামের প্ৰসিদ্ধ ভট্টাচাৰ্য বংশ হতে হিন্দুর মন্ত্র গ্রহণ করেন ও মহারাজা ভট্টাচাৰ্য উপাধি এবং বিপুল ব্ৰহ্মোত্তর দান করে যান। রাজা ধরম বক্স খাঁ তার সময়ে রাঙ্গামাটি মোজার বর্তমান জল মগ্ন পুরাতন বস্তী গ্রাম রাঙ্গুনীয়া উপজেলা হতে তার বহু প্রজাবৃন্দ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। রাজা ধরম বক্স খাঁ কালিন্দী, আটকবি ও হারিবি নামে তিন রাণী ছিল। কালিন্দী ও আটকবি নিঃসন্তান ছিল। হারিবির গর্ভে মেনকা (চিকনবি) নামে এক মেয়ে ছিল। তার সুশাসন দেখে প্রজাগণ তাকে ধরম বক্স মহারাজ বলত। রাজা ধরম বক্স খাঁ মৃত্যু বরণ করার পর ১৮৪৪ খ্রিষ্ঠাব্দে পতিব্রতা ধর্মপরায়ণ প্রথম পত্নী খালিন্দী রাণী রাজ্য শাসনের ভার প্রহন করেন। তার সময়ে রানী কালিন্দী রাজা নগর প্রসাদে রাজ মর্যাদায় মহাসমারোহে চিকনবির সাথে গোপীনাথ দেওয়ানের বিবাহ কার্য সুসম্পন্ন হয়। চিকনবি গর্ভে হরিশ্চন্দ্রের জন্ম হয়। চাকমা রাজাদের মধ্যে রাণী কালিন্দী সময়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। বিভিন্ন বিবরণ হতে জানা যায় রাণী কালিন্দী বিবিধ সদগুনের অধিকারিনী ও রাজনৈতিক দুরদর্শিতার যথেষ্ঠ জ্ঞান ছিল। রাণী কালিন্দনীর সময়ে এই সক্রিয়ভাবে এই জেলায় ইংরেজ শাসনের সুত্রপাত হয় এবং ফাসীর্র পরিবর্তে ইংরেজ ভাষা ব্যবহারও ন প্রথম সুত্রপাত হয়। তিনি লুসাই অভিযানের সময় বৃট্রিশ সরকারকে বিশেষ রুপে সাহায্য করেন। ১৮৭০ খ্রিষ্ঠাব্দে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলায় শাসন ব্যবস্থা পবিবতর্ন কল্পে বৃট্রিশ সরকার কর্তৃক মৌজা বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে হেডম্যান ও রোয়াজা পদ সৃষ্টি করে মৌজার অধিবাসীগণ কর্তৃক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় এবং পরে চাকমা রাজা কর্তৃক অনুমোদিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
তারা জুম টেক্স আদায় করবেন এবং মৌজার অভ্যন্তরীণ সুশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। তখন ক্যাপ্টেন লুইন ছিলেন এই বৃট্রিশ অধিকারের প্রাধান্য লাভের প্রতিষ্ঠাতা। চাকমা রাজাদের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্দেশ্য ১৮৮১ খ্রিষ্ঠাব্দে ১লা সেপ্টেম্বর বঙ্গীয় গভর্ণমেন্ট আবার পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করার ঘোষণা করেন। ১৮৯১ সাল হতে এই জেলার এসিস্টেন্ট কমিশনার হলেন শাসনকর্তা। এক সময় কেপ্টেন লুইন কালিন্দী রাণীর সঙ্গে রাজানগর রাজ প্রাসাদে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন। এতে ক্যাপ্টেন লুইন অতিশয় রাগান্বিত হলেন। একবার তিনি মহামুনি মেলার সময়ে রাজা নগর প্রাসাদে রাণীর সঙ্গে জোর করে সাক্ষাৎ করার চেষ্ঠা করলে রাণীর অনুচর দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হন।
কালিন্দী রাণীর মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র হরিশ্চন্দ্রকে ১৮৭৪ সালে বৃট্রিশ সরকার “রাজা” উপাধি প্রদানে রাজ্য ভার প্রদান করেন। রাজা হরিশ্চন্দ্রও লুসাই অভিযানে বৃট্রিশ সরকারের বিশেষ সাহায্য করেন। তাতে তিনি “রায় বাহাদুর” উপাধি এবং ১৫০০ (দেড় হাজার) টাকার মুল্যে সোনার ঘড়ি ও সোনার চেন উপহার প্রাপ্ত হন। তদানীন্তন লেপ্টেনেন্ট গভর্ণরের আদেশে এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারের নির্দেশে রাজা হরিশ্চন্দ্রর রায় বাহাদুর চাকমাদের রাজা বলে রাজানগর হতে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পূরাতন রাঙ্গামাটিতে আবার রাজধানী স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হন। তারপর রাজা হরিশ্চন্দ্রের বৈমাত্রেয় ভাই নবচ চন্দ্র দেওয়ান ব্যতীত অন্যান্য সকলে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী স্থানে বসতি স্থাপন করেন। আজও নবচ চন্দ্র দেওয়ানের ভাবীবংশধরগণ রাজানগর রাজ প্রাসাদে বসবাস করতেছেন। ১৮৮৫ সালে ১লা মার্চ তারিখে মহাসমারোহে রাজা হরিশ্চন্দ্রের পুত্র যুবরাজ ভূবন মোহন রায়ের বিবাহ রাজানগর রাজপ্রসাদে সুসম্পন্ন হয়। 
১৮৯৭ সালে রাজা হরিশ্চন্দ্র রায় বাহাদুর মৃত্যুর পর তার পুত্র ভূবন মোহন রায় স্থানীয় সহকারী কমিশনার মিষ্টার ডেলিডিন মহোদয়ের উপস্থিতিতে রাঙ্গামাটির রাজ প্রাসাদে মহাসমারোহে তাঁকে রাজ পদে অভিষিক্ত করেন। ১৮৯৮ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বেলভিদিয়া প্রাসাদে লেপ্টেনেন্ট গভর্ণর সার্জন উড্ডবরণ মহোদয় চাকমা রাজা ভূবন মোহন রায়কে “খেলাৎ”উপাদি প্রদান করেন। তারপর রাজা ভূবন মোহন রায় স্থানীয় ভাবে নতুন রাজধানী রাঙ্গামাটিতে বসবাস করতে থাকেন। তিনি এখানে পূর্বের চাকমা রাজপ্রাসাদ নতুন ভাবে নিমার্ণ করেন এবং বুদ্ধ গয়ার মন্দিরের অনুকরণে গৌতমমুনি মন্দির নামে এক বৃহৎ মন্দির ও বৌদ্দ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন।  ১৯৩৫ সালে ভূবন মোহন রায়ের মৃত্যুর পর তারপুত্র নলিনাক্ষ রায় বিভাগীয় কমিশনার মিষ্টার টুইনাম মহোদয় কর্তৃক রাজপদে অভিষিক্ত হন। এরপর ১৯৩৯ সালে ভারতের সম্রাট ষষ্ঠ জর্জের জন্ম দিবস উপলক্ষে সম্রাটের জয়ন্তীতে নলিনাক্ষ রায়কে “রাজা” উপাধি প্রধান করা হয়। তাঁরই উৎসাহে ও প্রচেষ্টায় পাবর্ত্য চট্টগ্রামের এক মাত্র পত্রিকা “গৌরিকা” প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ট তার রাজত্বের সময় পাকিস্থান স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৫৩ সালে নলিনাক্ষ রায় মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র ত্রিদীপ রায় পুরাতন রাঙ্গামাটি রাজ প্রাসাদে মহাসমারোহে বিভাগীয় কমিশনার পীর আসান উদ্দীন মহোদয়ের উপস্থিতিতে রাজপদে অভিষিক্ত হন। তিনি প্রথম স্বাধীন পাকিস্তানের চাকমা রাজা। ১৯৬০ সালে তার রাজত্বে সময় হাইড্রোইলেকট্রি সিটির জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাধঁ দেওয়া হয়। তিনি পাকিস্তান সরকার হতে “মেজর” উপাধি প্রাপ্ত হন। এ বাধেঁ ফলে এক লক্ষ আদিবাসী বাস্তুভিতা হারা হয়ে পড়ে। পাকিস্তান সরকারের পূর্নবাসনের অবহেলার কারেণ অনেক আদিবাসী ভারতে (বড় পুরঙ)চলে যেতে বাদ্য হয়। তার সময়ে নতুন রাজধানী রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত হয়। সে সময় পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্থান উভয়ই অংশ পাকিস্তান নামে অভিহিত হত। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধনিতা লাভ করে বাংলাদেশ নামে অভিহিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেজর রাজা ত্রিদীপ রায় জন্ম স্থান ত্রাগ করে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন।
১৯৭৭ সালে তার পুত্র দেবাশীষ রায় চট্টগ্রামে বিভাগে কমিশনার মিষ্টার আব্দুল আওযাল উপস্থিতিতে নতুন রাঙ্গামাটি রাজ প্রাসাদে রাজপদে অভিষিক্ত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের চাকমা রাজা। তার রাজত্ব কালে পিতামহি রাণী বিনীতা রায় এক সময় বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিমন্ত্রীর পদে অলংকৃত হন। রাজা দেবাশীষ রায়ে একমাত্র পুত্র ত্রিভূবন আর্যদেব রায়। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কাপ্তাই বাঁধ ও রড়পোরং

নিঝুম তালুকদার কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ পার্বত্যঞ্চলের এক বেদনাদায়ক যুগান্তকারী ঘটনা। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকে এই বাঁধ নির্মাণ এই অঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়। বিষয়টি এখনও বির্তকিত রয়েছে। পৃথিবীর অনেক আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে উন্নয়নের নামে যে সব প্রকল্প ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর বির্পযয় ও বিলুপ্তির জন্য দায়ী কাপ্তাই বাঁধ তন্মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখযোগ্য। এই বাঁধ অত্রাঞ্চলে পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক বিপর্যয়।  পার্বত্য অঞ্চলের জৈব্য বৈচিত্র্য, পরিবেশ ধ্বংস ছাড়াও চাকমা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর লোকজনকে বিলুপ্তির কাছাকাছি এনেছে কাপ্তাই বাঁধ। কাপ্তাই বাঁধ পার্বত্যঞ্চলের জনগণের তথা চাকমা জনগোষ্ঠীর দূর্গতির মূল কারণ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প উন্নয়নের নামে নির্মিত এই বাঁধ পার্বত্য অঞ্চলের অন্যতম আদিবাসী জনগোষ্ঠী চাকমা সম্প্রদায়কে বিলুপ্তি ও ধ্বংসের প্রান্তে এনেছে। আজ থেকে ৫০ বছর পূর্বে এই বাঁধ নির্মিত হলেও এর বিরুপ প্রভাব এখনও বিদ্যমান। ভৌগলিক, পরিবেশগত ও জৈব্য বৈচিত্র্যের উপর এর অবর্ণনীয় ক্ষতিকর প্রভাব হাজার বছরব্যাপী অত্রাঞ্চলে বিরাজ করবে। বাঁধ নির্মাণ কার্য যারা প্রত্যক্ষ

চাকমা জাতির এক মহীয়সী নারী চাকমা রাণী কালিন্দী

 ইলিরা দেওয়ান চাকমা রানী কালিন্দী কে নিয়ে সকলের মুখে প্রায়ই শোনা যায় যে চাকমা রাণী কালিন্দীর কারনে চাকমা জাতি রাজ্যহারা। তারই ভুলের জলন্ত আগুনের মশালে দহনীয় সমগ্র চাকমা জাতি। রাণী কালিন্দীর বিরদ্ধে সবার মাঝে যে ধারনা সেই বিষয় নিয়ে আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা । সবাই সাথে থাকুন। পড়তে থাকুন।  বৃটিশ আমলে উপমহাদেশের মহীয়সী নারীদের বীরত্ব গাঁথা কিংবা সমাজে তাঁদের অবদানের কথা বললে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে নবাব ফয়জুন্নেসা, বেগম রোকেয়াদের কথা। কিন্তু তাঁদের জন্মেরও পূর্বে আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে আরেক মহীয়সী নারীর কথা ক’জনইবা জানেন! উনিশ শতকের প্রথমদিকে রাস্তাঘাটহীন দূর্গম পার্বত্য এলাকার কুদুকছড়ির সাধারণ এক চাকমা জুমিয়া পরিবারে জন্মেছিলেন কালাবি চাকমা। পরবর্তীতে চাকমা রাজা ধরম বক্স খাঁ এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তিনি ‘কালিন্দী রাণী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠলেও তিনি স্বশিতি ছিলেন এবং তাঁর প্রাজ্ঞ দিয়ে রাজপরিবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে সম হয়েছিলেন। কালিন্দী রাণী শুধু বৈষয়িক বুদ্ধিতে কিংবা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় প্রাজ্ঞ ছিলেন না, এর পা

চাকমা রাজবংশের ইতিহাস (২য় পর্ব)

নিঝুম তালুকদার যা গতকালকের আলোচনায় আজুর সত্যি ঘটনার গল্পের কাহিনীতে "চাকোমাস" নামে যে চাকমাদের রাজ্যের নামটি উল্লেখ করা হয়েছিল সেটির ইতিহাস সুত্র ধরে আজুর সত্য ঘটনার গল্পের কাহিনীর সাথে অনেকের ইতিহাস লেখকের লেখা কাহিনীর সাথে মিল পেয়েছি। কারণ বহু লেখক লিখেছেন চাকমাদের রাজ্যের নাম "চাকোমাস"। এবং কিছু কিছু ঘটনাবলীও অনেক মিল রয়েছে। আরো একটি কাহিনী মিলিয়ে দেখুন।  চাকমা রাজপরিবার লিখেছেন-- সুশীল প্রসাদ চাকমা , রাঙ্গামাটি তিনি যা যা লিখেছেন সেগুলোর কপি দেওয়া হয়েছে। ইতিহাসের সূত্র মতে, হিমালয়ের পাদদেশে শাক্য নামে এক রাজা বাস করতেন। তার রাজধানী ছিল কালপ্পানগর। সেখানে ঈশ্বরের মূর্তি তৈরি করে ধ্যানে মগ্ন থাকতেন তিনি। যানকুনী মন্ত্রীর জন্ম ওই পরিবারে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে রাজ্য চালানোর জন্য তার খ্যাতি ছিল ব্যাপক। সুধন্য নামে শাক্য রাজার ছিলেন এক সাহসী ছেলে। তিনি ক্ষত্রীয় বীরদের মতো শত্রুদের দমন করতেন। রাজা সুধন্যর দুই রাণী ও তিন পুত্র সন্তান ছিল। প্রথম রাণীর ছেলে গুণধর রাজকীয় আনন্দ ত্যাগ করে মোহমুক্তির উদ্দেশ্যে সন্ন্যাসীর জীবনযাপন করেন। কনিষ্ঠ রাণীর আনন্

চাকমা রাজবংশের ইতিহাস

নিঝুম তালুকদার আমরা তখন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে শরনার্থী অবস্থায় ছিলাম। সেখানে অনেক ছেলে- মেয়েকে আমার আজু প্রায়ই গল্প শুনাতেন। একদিন আজু আজকের আলোচনা বিষয়টি সম্পর্কে একটি ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার গল্প বলেছিলেন। আজু যে ভাবে বলেছিলেন ঠিক সেইভাবে ঐ ঘটনার কথা নিয়ে আজকে আলোচনা করতে যাচ্ছি। সবাই সাথে থাকুন। চাকমা রাজপরিবার ইতিহাস অনুসারে সময়টা আনুমানিক ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষভাগ। চম্পক নগরের রাজা সাংবুদ্ধ। সাংবুদ্ধর দুই ছেলে- বড় ছেলের নাম বিজয়গিরি এবং ছোট ছেলের নাম সমরগিরি। যুবরাজ বিজয়গিরি যুদ্ধবিদ্যায় বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। ছেলেবেলা হতেই তিনি রাজ্য জয় ও রাজ্য বিস্তারের স্বপ্ন দেখতেন। চম্পক নগরের ভাবি রাজা একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিলেন।  ত্রিপুরার দক্ষিনে অবস্থিত মগ রাজ্য। মগরা ছিল দুস্য প্রকৃতির। তারা শহর ও গ্রামে লুন্ঠণ এবং মানুষের ওপর অত্যাচার করে বেড়াত । ত্রিপুরা রাজের অধিভূক্ত দক্ষিনাঞ্চলেও তাদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত ছিল না । এসময় ত্রিপুরা রাজ্যে অন্তঃবিপ্লবের সম্ভাবনা থাকায় রাজা মগদের দমনে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেনি। যুবরাজ বিজয়গিরি তার সামরিক অভিযানের

চাকমা রাজবংশের বিজক ও পিরি

নিঝুম তালুকদার ৫১তম চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়ের রাজপিরি ও বিজোগ বিগত কয়েক দিন আগে আমার আলোচনা পোষ্টে "চাকমা রাজবংশের ইতিহাস"টি নিয়ে বিভিন্ন মহলের আরো চাকমা রাজবংশের ইতিহাস সর্ম্পকে জানার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। তাতে আমারও উৎসাহ অগ্রসর হয়। আমিও উৎসাহ নিয়ে বিজোক ইতিহাস ঘাটাঘাটি করি। ইতিহাস সুত্রমতে বর্তমান চাকমা সার্কেলের রাজা দেবাশীষ রায়ের আমলে তিনি ৫১তম চাকমা রাজা যেভাবে হলেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু করি। ০১. অতি পুর্বকালে হিমালয়ের পাদদেশে শাক্য নামে এক রাজা ছিলেন। কলাপ্যা নগর তার রাজ্যের রাজধানী ছিল। তিনি ঐ নগরে ঈশ্বরের এক মূর্তি প্ৰস্তুত করিয়ে পূজা করতেন। ঐ রাজার বংশজ মন্ত্রীর নাম সাংকুস্য। মন্ত্রীরাজ রাজধানী শাসনের ভার নিয়ে দুষ্ট দমন করে সাবধানে প্রজা পালন করতেন। ০২. শাক্যরাজার পুত্ৰ সুধন্য মহা তেজস্বী হয়ে সর্বদা ক্ষত্ৰিয়ভাবে রিপু দমন করে বীর ভাব প্রকাশ করে থাকতেন। সাংকুস্য মন্ত্রীর পুত্ৰ জয়ধন সেনাপতির সংগে মহারাজ সুধন্য যুদ্ধসজ্জায় সর্বদা সজ্জিত থাকতেন এবং শত্রু দমনে সাবধান থাকতেন। সুধন্য মহারাজের দুই রাণী, তিন পুত্র ছিল। বড়রাণীর গর্ভজাত গুণধন রাজভো

পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ও ইতিহাস

নিঝুম তালুকদার আদিবাসী প্রসঙ্গ বস্তুতঃ বাংলাদেশে ‘ইন্ডিজেনাস’ বা ‘আদিবাসী’ কারা তা একটি মীমাংসিত বিষয়। কিন্তু তারপরও সরকার ও বাঙালী জাত্যাভিমানী-সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন একটি গোষ্ঠী জেনেও না জানার ভান করে আদিবাসী নিয়ে বিতর্কের অবতাড়না করছে। বিষয়টিকে জটিল রূপ দিয়েছে। ‘আদিবাসী’ বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল বা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সরকার আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করতে চাইছে অথবা তার দায়দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চাইছে। অন্য কোন দেশে এমন হয়নি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ এবং গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি বলে দাবীদার আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে। আবার বলা যেতে পারে, সরকার বর্তমানে আদিবাসী বিষয়ে ও আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে বা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। অথবা আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সরকার যে চরম রক্ষণশীল, এমনকী প্রতিক্রিয়াশীল- তার মুখোশই উন্মোচিত হয়েছে। এ জন্য এই সরকারকে একদিন মাশুল দিতে হবে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের আদিবাসীরা হুট করে নিজেরাই নিজেদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে দাবী করে বসেনি। জাতিসংঘ

জুম্মবির অতীত কথা ও স্মৃতি

তারাচরন চাকমা জুম্মবিতে লেখার, বলার ও প্রকাশ করতে সাহজ ও উৎসাহ দিয়ে সবসময়  সাথে থাকবেন। জুম্ম ঘরে জন্ম হওয়াতে তার নাম জুম্মবি। জুম্মবির তেরোটি জাতি সত্বার দশ ভাষার ছোট একটি দেশ জুম্ম দেশ। দশ ভাষায় কথা বলাতে তাকে ভাষাবিও ডাকা হয়। চার দিকে সবুজ সবুজ মুড়ো ও পাহাড় নিয়ে জুম্মবির জুম্মদেশে প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাইনো তিব্বতী মঙ্গোলয়ড ১৩ টি জাতিগোষ্ঠী এখানে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছে। প্রায় ৫,০০,০০ (পাঁচ লক্ষ)জনসংখ্যার অভিবাসী জুম্মজাতি প্রধান দু'টি হলো চাকমা এবং মারমা। এরা ছাড়াও আছে ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখো, ম্রো, খিয়াং, বম,খুমি, চাক,গুর্খা, আসাম। খুব সুখে ছিল সেখাানে তারা। জুম্মবির জুম্মদেশে দশ ভাষা ভাষি তেরোটি জাতি ছাড়া অন্য কোন জাতি ছিল না। ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে মগধের চম্পক নগরের রাজা উদয় গিরি এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘ

বৃটিশ শাসনে চাকমা জনগোষ্ঠীর সম্পাদনা

নিঝুম তালুকদার পলাশীর যুদ্ধের তিন বছর পরে, মুর্শিদাবাদের নতুন নবাব মীর কাশিম বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীকে চট্টগ্রাম বর্ধমান এবং মেদিনীপুর উপহার হিসেবে দিয়ে দেন। যেটি গতকাল আলোচনায় বলা হয়েছে। দিনটি ছিল ৫ জানুয়ারী ১৭৬১ সালে, কোম্পানীর প্রতিনিধি হ্যারি ভেরেলস্ট চট্টগ্রামের শাসনভার সুবেদার মোহাম্মদ রেজা খানের কাছ থেকে গ্রহন করেন। তবে তখনো চাকমা রাজা শের দৌলত খান স্বাধীনভাবে তার রাজ্য পরিচালনা এবং মুঘলদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। এবং কোম্পানীর শাসন মেনে না নিয়ে কোম্পানী কর্তৃক ধার্য নির্ধারিত খাজনা প্রদানে বিরত ছিলেন। ফলে কোম্পানির সাথে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, যা ১৭৮৭ সালপর্যন্ত চলেছিল। কোম্পানী চাকমা রাজের বিরুদ্ধে চারটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছিল। সেগুলো হল - ১৭৭০, ১৭৮০, ১৭৮২ এবং ১৭৮৫ সালের যুদ্ধ। যুদ্ধে কোম্পানী বিশেষ সুবিধে করতে না পারায় এবং চাকমা রাজ্যে বাণিজ্য অবরোধের ফলে সৃষ্ট সমস্যায় - দুই পক্ষই ১৭৮৫ সালে একটি শান্তি আলোচনা চালায়। চাকমা রাজের পক্ষে রাজা জানবক্স খান, শের দৌলত খানের পুত্র অংশ নেন। পরবর্তীতে ১৭৮৭ সালে কলকাতায় চাকমা রাজের সাথে কোম্প