নিঝুম তালুকদার আদিবাসী প্রসঙ্গ বস্তুতঃ বাংলাদেশে ‘ইন্ডিজেনাস’ বা ‘আদিবাসী’ কারা তা একটি মীমাংসিত বিষয়। কিন্তু তারপরও সরকার ও বাঙালী জাত্যাভিমানী-সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন একটি গোষ্ঠী জেনেও না জানার ভান করে আদিবাসী নিয়ে বিতর্কের অবতাড়না করছে। বিষয়টিকে জটিল রূপ দিয়েছে। ‘আদিবাসী’ বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভুল বা বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে সরকার আদিবাসীদের ন্যায্য অধিকারকে অস্বীকার করতে চাইছে অথবা তার দায়দায়িত্ব থেকে সরে যেতে চাইছে। অন্য কোন দেশে এমন হয়নি। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ এবং গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক শক্তি বলে দাবীদার আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান বাংলাদেশ সরকার অত্যন্ত সংকীর্ণতার পরিচয় দিচ্ছে। আবার বলা যেতে পারে, সরকার বর্তমানে আদিবাসী বিষয়ে ও আদিবাসীদের অধিকারের বিষয়ে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছে বা ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। অথবা আদিবাসীদের অধিকারের স্বীকৃতির ক্ষেত্রে সরকার যে চরম রক্ষণশীল, এমনকী প্রতিক্রিয়াশীল- তার মুখোশই উন্মোচিত হয়েছে। এ জন্য এই সরকারকে একদিন মাশুল দিতে হবে। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশের আদিবাসীরা হুট করে নিজেরাই নিজেদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে দাবী করে বসেনি। জাতিসংঘ...
নিঝুম তালুকদার
আমি পুর্বের আলোচনাতে চাকমা রাজ বংশের বংশানুক্রমিক ও পিরি নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আর নতুন করে সে বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন নেই।
তাই সংক্ষেপে আলোচনা শুরু করছি।
সবাই সাথে থাকুন। পড়তে থাকুন।
জনু রাজার পুত্র ছিল না―শুধু দুই কন্যা। জনু রাজা ১২০ বৎসর পৰ্যন্ত জীবিত ছিলেন। বড় কন্যা সাজোম্বীকে মগ রাজা বিবাহ করে। দ্বিতীয় কন্যা রাজেস্বীকে বুড়া বড়ুয়া বিবাহ করেন। বুড়া বড়ুয়ার পুত্র সাত্তুয়া রাজা হন। তিনি পরে পাগলা রাজা বলে প্ৰসিদ্ধ হন। পাগলা রাজা অতিশয় জ্ঞানী ছিলেন। কথিত আছে মন্ত্র বলে তিনি চিৎকলিজা বের করে ধৌত করে আবার ঢুকিয়ে রাখতেন। এই কার্য করতে তাঁর রাণী উকি দিয়ে দেখলে, তিনি আর ঢুকাতে পারলেন না। তাঁতে প্রকৃত পাগল হন। যাকে তাকে কাটতে লাগলেন। সেজন্য তার রাণীর সম্মতিতে তাকে হত্যা করা হয়।
প্ৰবাদ আছে- "তিনি একদিন টংগীতে বসেছিলেন এবং জংগলী হাতী এসেছে বলে পূর্ব প্ৰস্তাব মতে মিথ্যা রটনা করাতে বন্য হাতী দেখবার জন্য মাথা বের করলেন। তখন পেছনদিক হতে তার শিরচ্ছেদ করা হয়।" পাগলা রাজার মৃত্যুর পর রাণী রাজকাৰ্য চালান।
“কাটুয়া কন্যার” আমল বলে তার দুর্নাম রটেছিল। পাগলা রাজার কন্যা অমংগলী। রাজ কন্যা অমঙ্গলীর সাথে রাজ অমাত্যের পুত্র মুলিমা থংজার বিবাহ হয়। অমঙ্গলীর পুত্র ধাবনাই রাজ সিংহাসন লাভ করেন। অমঙ্গলীর আরো একটি পুত্র ছিল তার নাম পিড়া ভাঙ্গা। রাজা ধাবনাই মৃত্যু হলে তার পুত্র কুমার ধারাম্যা রাজা হন। ধারাম্যা কিছু দিন রাজত্ব করে মুত্যু বরণ করার পর তার পুত্র মৌগ্যল্যা রাজা হলেন। ১৬৬৬ খ্রিষ্ঠাব্দে শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম দখল করেন এবং চট্টগ্রাম দিল্লীর মোঘন সম্রাজ্যভুক্ত করেন। এ সময় চাকমা রাজারা মোঘল শাসন কালে “খা" এবং মেয়েদের জন্য “বিবি” উপাধি গ্রহণে গৌরব অনুভব করতেন। তখন মুসলিম সমাজ রীতিতে চাকমা নারীদের মৃত্যু হলে দাহক্রিয়া সময় পশ্চিম দিকে মাথা রেখে দাহ করা হয়। এই জন্য বাঙ্গালী মুসলমান ভাবধারায় চাকমা রাজাদের মধ্যে সংমিশ্রিত নাম পরিদৃষ্ট হয়। কালক্রমে মেয়েদের উপাধি “বিবি” নাম হতে “বি” পরিবর্তীত হয়। এ মোগল সময় রাজা মৌগল্যার দুই পুত্রের নাম রাখেন জুবাল খাঁ ও ফতে খাঁ নামে। রাজা মৌগল্যার মৃত্যুর পর জুবাল খা রাজা হন। আরাকানদের সঙ্গে জুবাল খাঁর বহু বার যুদ্ধ হয়েছে। তার সেনাপতি কালু খাঁ সর্দার আর মুসলমান নবাবদের সঙ্গে অনেক বড় বড় যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। জুবাল খাঁ অল্প বয়সে মারা যান এবং রাজ্য শাসনের জন্য তার কোন সন্তান ছিল না।সুতরাং জুবাল খাঁ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তার ভাই ফতে খাঁ রাজা হন। ১৭১৫ খ্রিষ্ঠাব্দে ফতে খাঁ বাংলা নবাবেদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। ফতে খাঁর তিন পুত্র ছিল। শেরমুস্ত খাঁ, রহমত খাঁ ও শেজান খাঁ। জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেরমুস্ত খাঁ ১৭৩৭ খ্রিষ্ঠাব্দে রাজা হন। চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর রাজত্বকালে চট্টগ্রাম জেলাসহ পাবর্ত্য অঞ্চল তার অধিকারে ছিল। তার রাজ্য সীমা ছিল উত্তরে ফেনী নদী, দক্ষিণে শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্তান, পূর্বে লুসাই পাহাড়, পশ্চিমে নিজামপুর রাস্তা অর্থাৎ বর্তমান ট্রাংক রোড। আরাকানীদের অত্যাচারে চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁ মোগল নায়েকের সঙ্গে মিত্রতা করেন এবং শুল্ক প্রদানে স্বীকৃতি প্রদান করেন। মোগল শাসনকালে চাকমা রাজা ছিলেন করদ রাজন্যবর্গ। চাকমা রাজা রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে সম্পূর্ন স্বাধীন ছিল। সে সময়ে চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর রাজধানী ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাতামুহুরি নদীর নিকটবর্তী। চাকমাদের বহু স্মৃতি চিহ্ন আজও পরিদৃষ্ট হয়। যেমন- চাকমা পুকুর, চাকমা কুল, চাকমা বিল, চাকমা পাড়া ইত্যাদি যদিও বর্তমানে সেখানে চাকমা বসতি নেই। রাজা শেরমুস্ত খাঁর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তার ভাই শের্জান খাঁর পুত্র শুকদেব রাজা হন। রাজা শুকদেবের কার্যকলাপের সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মোঘলদের হতে “রায়’ উপাধি এবং শুক তরফ নামে একটি তরফের বন্দোবস্তি প্রাপ্ত হন। তখন থেকে রাজার নাম হয় রাজা শুকদেব রায়।
“কাটুয়া কন্যার” আমল বলে তার দুর্নাম রটেছিল। পাগলা রাজার কন্যা অমংগলী। রাজ কন্যা অমঙ্গলীর সাথে রাজ অমাত্যের পুত্র মুলিমা থংজার বিবাহ হয়। অমঙ্গলীর পুত্র ধাবনাই রাজ সিংহাসন লাভ করেন। অমঙ্গলীর আরো একটি পুত্র ছিল তার নাম পিড়া ভাঙ্গা। রাজা ধাবনাই মৃত্যু হলে তার পুত্র কুমার ধারাম্যা রাজা হন। ধারাম্যা কিছু দিন রাজত্ব করে মুত্যু বরণ করার পর তার পুত্র মৌগ্যল্যা রাজা হলেন। ১৬৬৬ খ্রিষ্ঠাব্দে শায়েস্তা খান চট্টগ্রাম দখল করেন এবং চট্টগ্রাম দিল্লীর মোঘন সম্রাজ্যভুক্ত করেন। এ সময় চাকমা রাজারা মোঘল শাসন কালে “খা" এবং মেয়েদের জন্য “বিবি” উপাধি গ্রহণে গৌরব অনুভব করতেন। তখন মুসলিম সমাজ রীতিতে চাকমা নারীদের মৃত্যু হলে দাহক্রিয়া সময় পশ্চিম দিকে মাথা রেখে দাহ করা হয়। এই জন্য বাঙ্গালী মুসলমান ভাবধারায় চাকমা রাজাদের মধ্যে সংমিশ্রিত নাম পরিদৃষ্ট হয়। কালক্রমে মেয়েদের উপাধি “বিবি” নাম হতে “বি” পরিবর্তীত হয়। এ মোগল সময় রাজা মৌগল্যার দুই পুত্রের নাম রাখেন জুবাল খাঁ ও ফতে খাঁ নামে। রাজা মৌগল্যার মৃত্যুর পর জুবাল খা রাজা হন। আরাকানদের সঙ্গে জুবাল খাঁর বহু বার যুদ্ধ হয়েছে। তার সেনাপতি কালু খাঁ সর্দার আর মুসলমান নবাবদের সঙ্গে অনেক বড় বড় যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। জুবাল খাঁ অল্প বয়সে মারা যান এবং রাজ্য শাসনের জন্য তার কোন সন্তান ছিল না।সুতরাং জুবাল খাঁ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে তার ভাই ফতে খাঁ রাজা হন। ১৭১৫ খ্রিষ্ঠাব্দে ফতে খাঁ বাংলা নবাবেদের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন। ফতে খাঁর তিন পুত্র ছিল। শেরমুস্ত খাঁ, রহমত খাঁ ও শেজান খাঁ। জ্যৈষ্ঠ পুত্র শেরমুস্ত খাঁ ১৭৩৭ খ্রিষ্ঠাব্দে রাজা হন। চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর রাজত্বকালে চট্টগ্রাম জেলাসহ পাবর্ত্য অঞ্চল তার অধিকারে ছিল। তার রাজ্য সীমা ছিল উত্তরে ফেনী নদী, দক্ষিণে শঙ্খ নদীর মধ্যবর্তী স্তান, পূর্বে লুসাই পাহাড়, পশ্চিমে নিজামপুর রাস্তা অর্থাৎ বর্তমান ট্রাংক রোড। আরাকানীদের অত্যাচারে চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁ মোগল নায়েকের সঙ্গে মিত্রতা করেন এবং শুল্ক প্রদানে স্বীকৃতি প্রদান করেন। মোগল শাসনকালে চাকমা রাজা ছিলেন করদ রাজন্যবর্গ। চাকমা রাজা রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক ব্যাপারে সম্পূর্ন স্বাধীন ছিল। সে সময়ে চাকমা রাজা শেরমুস্ত খাঁর রাজধানী ছিল দক্ষিণ চট্টগ্রামে মাতামুহুরি নদীর নিকটবর্তী। চাকমাদের বহু স্মৃতি চিহ্ন আজও পরিদৃষ্ট হয়। যেমন- চাকমা পুকুর, চাকমা কুল, চাকমা বিল, চাকমা পাড়া ইত্যাদি যদিও বর্তমানে সেখানে চাকমা বসতি নেই। রাজা শেরমুস্ত খাঁর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় তার ভাই শের্জান খাঁর পুত্র শুকদেব রাজা হন। রাজা শুকদেবের কার্যকলাপের সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মোঘলদের হতে “রায়’ উপাধি এবং শুক তরফ নামে একটি তরফের বন্দোবস্তি প্রাপ্ত হন। তখন থেকে রাজার নাম হয় রাজা শুকদেব রায়।
রাজা শুকদেব রায় পূর্ব রাজধানী আলী কদম ত্যাগ করে চাকমা অধ্যুষিত রাঙ্গনীয়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের শিলক নদীর নিকটবর্তী স্থানে একটি মনোহর প্রাসাদ নির্মান করেন। সেই স্থান “শুক বিলাস” নাম প্রদান করে রাজধানী স্থাপন করেন। রাজা শুকদেব রায় হিন্দু ধর্মের প্রতি উদার ছিলেন । ত্রিপুরার মহারাজ চাকমা রাজা শুকদেব রায়ের কার্য্যকলাপে সন্তষ্ট হয়ে সম্প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ তাঁকে কয়েক ঘর ত্রিপুরা প্রদান করেন । ১৭৫৭ খৃষ্টাব্দে রাজা শুকদেব রায় ছিলেন মোগল আমলের শেষ রাজা । তিনি রাজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে নিযুক্ত চাকমা সর্দার ও সম্ভ্রান্ত লোকদেরকে "শুক বিলাস" রাজধানীতে ডেকে সর্বপ্রথম “খীসা, দেওয়ান ও তালুকদার” উপাধি প্রদান করেন । চট্টগ্রামের পদুয়াতেোও অদ্যাবধি চাকমা রাজবংশের বহু স্মৃতিচিহ্ন পরিদৃষ্ট হয় । যেমন –শুকদেব তরফ, রাজার দীঘি, শুকবিলাস ইত্যাদি ।
১৭৬০ খৃষ্টাব্দে নবাব মীর কাশীম ইংরেজ বাহিনীর সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে চট্টগ্রামের শাসনভার ইংরেজদের হাতে অর্পন করেন । তাদের শাসনামলে শাসনের সুবিধার্থে ও ভৌগলিক দুরত্বের কারনে চট্টগ্রাম অঞ্চলকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন , একটি অংশ চট্টগ্রাম এবং অপর অংশটি পার্বত্য চট্টগাম অঞ্চল নামে অভিহিত করা হয় । রাজা শুকদেব রায়ের মৃত্যুর পর ১৭৭৬ খৃষ্টাব্দে তাঁর পুত্র সেরদৌলত খাঁ রাজ্য ভার গ্রহণ করেন । এ সময় ইংরেজদের সাথে ভীষণ যুদ্ধ হয় । তিনি ইংরেজদের কর দেওয়া বন্ধ করেন এবং স্বাধীনভাবে রাজ্য শাসন করতেন ।সের দৌলত খাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জান বক্স খাঁ ১৭৮২ খৃষ্টাব্দে রাজা হন । তারঁ সময়ে ১৭৮৩, ১৭৮৪, ১৭৮৫ খৃষ্টাব্দে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ হয়, যুদ্ধে পরাজিত হয়ে জানবক্স খাঁ তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস এর নিকট বশ্যতা স্বীকার করেন।
এ সময়টি ইতিহাসের পাতায় "চাকমা বিদ্রোহ" নামে পরিচিত।
রাজা জানবক্স খাঁ নানা অসুবিধার কারণে শুকবিলাস হতে রাঙ্গুনীয়া উপজেলায় চাকমা অধ্যুষিত রাজানগরে আবার নতুন রাজধানী স্থাপন করেন । তিনি ১৭৯৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেন ।
রাজা জান বক্স খাঁর মৃত্যর পর টকবর খাঁ রাজা হন। তাঁর সময়ে রাজা নগরে সাগর দীঘি খনন করা হয় । টকবর খাঁ নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান। রাজা টব্বর খাঁর মৃত্যুর পর তদীয় ভ্রাতা জব্বর খাঁ রাজা হন। রাজবংশের কুলপ্ৰথা মতে জব্বর খাঁর মৃত্যুর পর তদীয় পুত্ৰ ধরমবক্স খাঁ ১৮১২ খ্রী, রাজা হন। মহারাজা চট্টগ্রামের প্ৰসিদ্ধ ভট্টাচাৰ্য বংশ হতে হিন্দুর মন্ত্র গ্রহণ করেন ও মহারাজা ভট্টাচাৰ্য উপাধি এবং বিপুল ব্ৰহ্মোত্তর দান করে যান। রাজা ধরম বক্স খাঁ তার সময়ে রাঙ্গামাটি মোজার বর্তমান জল মগ্ন পুরাতন বস্তী গ্রাম রাঙ্গুনীয়া উপজেলা হতে তার বহু প্রজাবৃন্দ নিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলেন। রাজা ধরম বক্স খাঁ কালিন্দী, আটকবি ও হারিবি নামে তিন রাণী ছিল। কালিন্দী ও আটকবি নিঃসন্তান ছিল। হারিবির গর্ভে মেনকা (চিকনবি) নামে এক মেয়ে ছিল। তার সুশাসন দেখে প্রজাগণ তাকে ধরম বক্স মহারাজ বলত। রাজা ধরম বক্স খাঁ মৃত্যু বরণ করার পর ১৮৪৪ খ্রিষ্ঠাব্দে পতিব্রতা ধর্মপরায়ণ প্রথম পত্নী খালিন্দী রাণী রাজ্য শাসনের ভার প্রহন করেন। তার সময়ে রানী কালিন্দী রাজা নগর প্রসাদে রাজ মর্যাদায় মহাসমারোহে চিকনবির সাথে গোপীনাথ দেওয়ানের বিবাহ কার্য সুসম্পন্ন হয়। চিকনবি গর্ভে হরিশ্চন্দ্রের জন্ম হয়। চাকমা রাজাদের মধ্যে রাণী কালিন্দী সময়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। বিভিন্ন বিবরণ হতে জানা যায় রাণী কালিন্দী বিবিধ সদগুনের অধিকারিনী ও রাজনৈতিক দুরদর্শিতার যথেষ্ঠ জ্ঞান ছিল। রাণী কালিন্দনীর সময়ে এই সক্রিয়ভাবে এই জেলায় ইংরেজ শাসনের সুত্রপাত হয় এবং ফাসীর্র পরিবর্তে ইংরেজ ভাষা ব্যবহারও ন প্রথম সুত্রপাত হয়। তিনি লুসাই অভিযানের সময় বৃট্রিশ সরকারকে বিশেষ রুপে সাহায্য করেন। ১৮৭০ খ্রিষ্ঠাব্দে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলায় শাসন ব্যবস্থা পবিবতর্ন কল্পে বৃট্রিশ সরকার কর্তৃক মৌজা বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে হেডম্যান ও রোয়াজা পদ সৃষ্টি করে মৌজার অধিবাসীগণ কর্তৃক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয় এবং পরে চাকমা রাজা কর্তৃক অনুমোদিত হবে বলে ঘোষণা করা হয়।
তারা জুম টেক্স আদায় করবেন এবং মৌজার অভ্যন্তরীণ সুশৃঙ্খলা রক্ষা করবেন। তখন ক্যাপ্টেন লুইন ছিলেন এই বৃট্রিশ অধিকারের প্রাধান্য লাভের প্রতিষ্ঠাতা। চাকমা রাজাদের ক্ষমতা খর্ব করার উদ্দেশ্য ১৮৮১ খ্রিষ্ঠাব্দে ১লা সেপ্টেম্বর বঙ্গীয় গভর্ণমেন্ট আবার পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলাকে তিনটি সার্কেলে বিভক্ত করার ঘোষণা করেন। ১৮৯১ সাল হতে এই জেলার এসিস্টেন্ট কমিশনার হলেন শাসনকর্তা। এক সময় কেপ্টেন লুইন কালিন্দী রাণীর সঙ্গে রাজানগর রাজ প্রাসাদে সাক্ষাৎ করতে চাইলে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন। এতে ক্যাপ্টেন লুইন অতিশয় রাগান্বিত হলেন। একবার তিনি মহামুনি মেলার সময়ে রাজা নগর প্রাসাদে রাণীর সঙ্গে জোর করে সাক্ষাৎ করার চেষ্ঠা করলে রাণীর অনুচর দ্বারা বাধা প্রাপ্ত হন।
কালিন্দী রাণীর মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র হরিশ্চন্দ্রকে ১৮৭৪ সালে বৃট্রিশ সরকার “রাজা” উপাধি প্রদানে রাজ্য ভার প্রদান করেন। রাজা হরিশ্চন্দ্রও লুসাই অভিযানে বৃট্রিশ সরকারের বিশেষ সাহায্য করেন। তাতে তিনি “রায় বাহাদুর” উপাধি এবং ১৫০০ (দেড় হাজার) টাকার মুল্যে সোনার ঘড়ি ও সোনার চেন উপহার প্রাপ্ত হন। তদানীন্তন লেপ্টেনেন্ট গভর্ণরের আদেশে এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনারের নির্দেশে রাজা হরিশ্চন্দ্রর রায় বাহাদুর চাকমাদের রাজা বলে রাজানগর হতে পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পূরাতন রাঙ্গামাটিতে আবার রাজধানী স্থানান্তরিত করতে বাধ্য হন। তারপর রাজা হরিশ্চন্দ্রের বৈমাত্রেয় ভাই নবচ চন্দ্র দেওয়ান ব্যতীত অন্যান্য সকলে নিজ নিজ সুবিধানুযায়ী স্থানে বসতি স্থাপন করেন। আজও নবচ চন্দ্র দেওয়ানের ভাবীবংশধরগণ রাজানগর রাজ প্রাসাদে বসবাস করতেছেন। ১৮৮৫ সালে ১লা মার্চ তারিখে মহাসমারোহে রাজা হরিশ্চন্দ্রের পুত্র যুবরাজ ভূবন মোহন রায়ের বিবাহ রাজানগর রাজপ্রসাদে সুসম্পন্ন হয়।
১৮৯৭ সালে রাজা হরিশ্চন্দ্র রায় বাহাদুর মৃত্যুর পর তার পুত্র ভূবন মোহন রায় স্থানীয় সহকারী কমিশনার মিষ্টার ডেলিডিন মহোদয়ের উপস্থিতিতে রাঙ্গামাটির রাজ প্রাসাদে মহাসমারোহে তাঁকে রাজ পদে অভিষিক্ত করেন। ১৮৯৮ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বেলভিদিয়া প্রাসাদে লেপ্টেনেন্ট গভর্ণর সার্জন উড্ডবরণ মহোদয় চাকমা রাজা ভূবন মোহন রায়কে “খেলাৎ”উপাদি প্রদান করেন। তারপর রাজা ভূবন মোহন রায় স্থানীয় ভাবে নতুন রাজধানী রাঙ্গামাটিতে বসবাস করতে থাকেন। তিনি এখানে পূর্বের চাকমা রাজপ্রাসাদ নতুন ভাবে নিমার্ণ করেন এবং বুদ্ধ গয়ার মন্দিরের অনুকরণে গৌতমমুনি মন্দির নামে এক বৃহৎ মন্দির ও বৌদ্দ বিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৫ সালে ভূবন মোহন রায়ের মৃত্যুর পর তারপুত্র নলিনাক্ষ রায় বিভাগীয় কমিশনার মিষ্টার টুইনাম মহোদয় কর্তৃক রাজপদে অভিষিক্ত হন। এরপর ১৯৩৯ সালে ভারতের সম্রাট ষষ্ঠ জর্জের জন্ম দিবস উপলক্ষে সম্রাটের জয়ন্তীতে নলিনাক্ষ রায়কে “রাজা” উপাধি প্রধান করা হয়। তাঁরই উৎসাহে ও প্রচেষ্টায় পাবর্ত্য চট্টগ্রামের এক মাত্র পত্রিকা “গৌরিকা” প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ১৪ আগষ্ট তার রাজত্বের সময় পাকিস্থান স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৫৩ সালে নলিনাক্ষ রায় মৃত্যুবরণ করলে তার পুত্র ত্রিদীপ রায় পুরাতন রাঙ্গামাটি রাজ প্রাসাদে মহাসমারোহে বিভাগীয় কমিশনার পীর আসান উদ্দীন মহোদয়ের উপস্থিতিতে রাজপদে অভিষিক্ত হন। তিনি প্রথম স্বাধীন পাকিস্তানের চাকমা রাজা। ১৯৬০ সালে তার রাজত্বে সময় হাইড্রোইলেকট্রি সিটির জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাধঁ দেওয়া হয়। তিনি পাকিস্তান সরকার হতে “মেজর” উপাধি প্রাপ্ত হন। এ বাধেঁ ফলে এক লক্ষ আদিবাসী বাস্তুভিতা হারা হয়ে পড়ে। পাকিস্তান সরকারের পূর্নবাসনের অবহেলার কারেণ অনেক আদিবাসী ভারতে (বড় পুরঙ)চলে যেতে বাদ্য হয়। তার সময়ে নতুন রাজধানী রাঙ্গামাটিতে স্থানান্তরিত হয়। সে সময় পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্থান উভয়ই অংশ পাকিস্তান নামে অভিহিত হত। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান স্বাধনিতা লাভ করে বাংলাদেশ নামে অভিহিত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেজর রাজা ত্রিদীপ রায় জন্ম স্থান ত্রাগ করে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করেন।
১৯৭৭ সালে তার পুত্র দেবাশীষ রায় চট্টগ্রামে বিভাগে কমিশনার মিষ্টার আব্দুল আওযাল উপস্থিতিতে নতুন রাঙ্গামাটি রাজ প্রাসাদে রাজপদে অভিষিক্ত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের চাকমা রাজা। তার রাজত্ব কালে পিতামহি রাণী বিনীতা রায় এক সময় বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিমন্ত্রীর পদে অলংকৃত হন। রাজা দেবাশীষ রায়ে একমাত্র পুত্র ত্রিভূবন আর্যদেব রায়।
১৯৭৭ সালে তার পুত্র দেবাশীষ রায় চট্টগ্রামে বিভাগে কমিশনার মিষ্টার আব্দুল আওযাল উপস্থিতিতে নতুন রাঙ্গামাটি রাজ প্রাসাদে রাজপদে অভিষিক্ত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের চাকমা রাজা। তার রাজত্ব কালে পিতামহি রাণী বিনীতা রায় এক সময় বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির প্রতিমন্ত্রীর পদে অলংকৃত হন। রাজা দেবাশীষ রায়ে একমাত্র পুত্র ত্রিভূবন আর্যদেব রায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন